লেখক মোল্লা আতাউর রহমান মিন্টু: সম্পাদক HMnews24.com
আজিমপুর, বনানী, জুরাইন, খিলগাওসহ রাজধানীর সব কবরস্থানে লাশ দাফনের আর জায়গা নেই। প্রতিদিনই লাশের সংখ্যা বাড়ছে। এতো লাশ কেউ কখনো দেখেনি। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হওয়ায় লাশের সংখ্যা সীমাহীন বেড়ে গেছে। প্রতিদিন অসংখ্য লাশ আসায় পাশের কবর ভেঙ্গে তার ওপর নতুন করে কবর দেয়া হচ্ছে। স্বজনরা লাশ নিয়ে এসে অনেক সময় বিপাকেও পড়ছেন। এদিকে লাশের সারি দেখে হিমসিম খাচ্ছেন কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা লোকজন। এতো লাশ দাফন করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেল, আজিমপুর কবরস্থানে গত মে মাসে এখানে লাশ দাফন করা হয়েছে ১০৩৪টি। আর বর্তমান জুন মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত লাশ দাফন করা হয়েছে ৫১৫টি। অথচ গত বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের মে মাসে লাশ দাফন করা হয় ৭৭৭টি। এর আগের বছর মে মাসে লাশ দাফন করা হয় ৭০৫টি। ২০১৯ সালের জুন মাসে লাশ দাফন করা হয় ৭০৭টি। আর এর আগের বছর জুন মাসে লাশ দাফন করা হয় ৬৬৫টি।
রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে গত মার্চে ৩০৭, এপ্রিল মাসে ৩১৫, মে মাসে ৪০৮ এবং চলতি জুন মাসের প্রথম দিন ১৭২টি লাশ দাফন করা হয়। অথচ ২০১৯ সালের মার্চে ৭৮৩টি লাশ দাফন করা হয়। এপ্রিলে ২৬৪, মে মাসে ৩১২ এবং চলতি মাসের প্রথম দিন ২৯১টি লাশ দাফন করা হয়। বনানী কবরস্থানে জানুয়ারিতে ৫৪টি, ফেব্রুয়ারিতে ৬৮, মার্চে ৭৭, এপ্রিলে ৭১, মে মাসে ৯৫ টি লাশ দাফন করা হয়েছে। অথচ ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ৫১, ফেব্রুয়ারিতে ৪৮, মার্চে ৪৩, এপ্রিলে ৫৩ এবং মে মাসে ৫৫টি লাশ দাফন করা হয়।
এছাড়া রায়েরবাজার বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন কবরস্থানে জানুয়ারি ১৬২, ফেব্রুয়ারিতে ১৪৮, মার্চে ১৫৬, এপ্রিলে ১৭৪ এবং মে মাসে ২৭২টি লাশ দাফন করা হয়েছে। চলতি মাসের ১৭ জুন পর্যন্ত ১৪০টি লাশ দাফন করা হয়েছে। তালতলা কবরস্থানে জানুয়ারিতে ৪১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৪, মার্চে ৫২, এপ্রিলে ৩৪ এবং মে মাসে ৬৪ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে জানুয়ারিতে ১৫২, ফেব্রুয়ারিতে ১৩৬, মার্চে ১৪২, এপ্রিলে ১৫১, মে মাসে ২০৮টি লাশ দাফন করা হয়েছে। অন্যান্য কবরস্থানেরও একই অবস্থা।
একই অবস্থা রাজধানীর শ্মশান গুলোতেও। সেখানেও লাশের সারি সারি। পোস্তগোলার শ্মশান রাজধানীর মধ্যে সবচেয়ে বড়। লাশ এতো বেড়েছে যে চলতি জুনের শুধু প্রথম দিনেই এখানে লাশ সৎকার হয়েছে ৮৫টি। অথচ গত বছর জুন মাসে এখানে ৭৬টি লাশ সৎকার করা হয়। পোস্তগোলা শ্মশানে ২০১৮ সালে মোট লাশ সৎকার করা হয় ৭৯৯টি। ২০১৯ সালে ৮৩৩টি লাশ সৎকার করা হয়। আর চলতি ১৫ জুন পর্যন্ত সৎকার করা হয়েছে ৫৯৯টি। কামরাঙ্গীরচর শ্মশানে গত মার্চে ২০টি, এপ্রিলে ২১টি, মেতে ২০টি এবং চলতি জুন মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১১টি লাশ সৎকার করা হয়েছে।
এভাবেই প্রতিদিন লাশের সংখ্যা বাড়ছে। এটা অস্বাভাবিক লাশ বৃদ্ধি। করোনা ভাইরাস মানুষের মৃত্যুর হার বাড়িয়ে দিয়েছে। সামনের দিনগুলোতে কি হয় সে ব্যাপারে দেশের সব মানুষ উদ্বিগ্ন। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের যে পরিস্থিতি তাতে প্রতীয়মান হয় যে আগামীতে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে চলে যেতে পারে। এ অবস্থা শুধু আমাদের দেশের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মানুষের জন্য একই অবস্থা। বিশ্বে সাড়ে চার লাখের বেশি মানুষ মারা গেছে।
বাংলাদেশে সাড়ে তেরশ’র বেশি মানুষ মারা গেছে। আক্রান্ত লাখের ওপরে। প্রতিদিন মৃত্যুর হার যেভাবে বাড়ছে তাতে আজিমপুরসহ সব কবরস্থানে আর হয়তো কবর দেয়ার জায়গা থাকবে না। এতো লাশ মানুষ আর দেখতে চায় না। এই মরণঘাতী রোগ সারতে ডাক্তার নয়, মহান আল্লাহপাকই আমাদের একমাত্র ভরসা। আমাদের প্রার্থনা- দুনিয়া থেকে মানুষ নয়- মরণঘাতী করোনা বিদায় নিক। কবর হোক করোনার।
লেখক: বিশিষ্ট সাংবাদিক, গবেষক, সম্পাদক ও প্রকাশক এইচএমনিউজ২৪.কম, বার্তা ও টেলিভিশন প্যাকেজ অনুষ্ঠান প্রযোজনা এবং চলচ্চিত্র পরিবেশনা ও প্রযোজনা সংস্থা হোম মিডিয়ার চেয়ারম্যান।